জেলা প্রতিনিধি বরগুনা ঃ
বরগুনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল শ্যালিকাকে ধর্ষণের ব্যর্থ চেষ্টা ও দুই শিশুকে হত্যার দায়ে আসামি মোঃ ইলিয়াস পহলানকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছে। রবিবার দুপুরে বরগুনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ বেগম লায়লাতুল ফেরদৌস এই রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় আসামি মোঃ ইলিয়াস পহলান আদালতে উপস্থিত ছিলেন। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশেষ পিপি রনজুয়ারা সিপু।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, বরগুনা সদর উপজেলার ফুলকুড়ি ইউনিয়নের গুদিঘাটা গ্রামে গৃহবধূ মোসাঃ রিগান তার তিন বছরের শিশু কন্যা তাইফাকে নিয়ে পৈত্রিক ভিটার টিনের ঘরে বসবাস করতেন। একই ঘরে থেকে পড়াশোনা করত ১০ বছরের শিশু মোঃ হাফিজুল, যিনি রাতে রিগানকে পাহারা দিত। ২০২৩ সালের ৩ আগস্ট রাত ১২টার পর ইলিয়াস পহলান কৌশলে রিগানের ঘরে প্রবেশ করে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। রিগান চিৎকার করলে ঘুম ভেঙে যায় হাফিজুলের। রিগানকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসলে ইলিয়াস ধারালো দা দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। এতে ঘটনাস্থলেই হাফিজুল মারা যায় এবং গুরুতর আহত অবস্থায় রিগানের মেয়ে তাইফাকেও হারাতে হয়।
পরদিন ৪ আগস্ট সকালে রিগানের বড় ভোন মোর্শেদা ফোনে পরিবারকে বিষয়টি জানালে, রিগানের ভাই রিপন সরদার বরগুনা থানায় অভিযোগ করেন। পুলিশ তদন্ত শেষে মোঃ ইলিয়াসের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়।
আদালত তার রায়ে উল্লেখ করেন, ইলিয়াস পহলান রিগানকে ধর্ষণের উদ্দেশ্যে তার ঘরে প্রবেশ করে। বাধার সম্মুখীন হয়ে সে ১০ বছরের শিশু হাফিজুল এবং তিন বছরের শিশু তাইফাকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করে।
আদালত তাকে দুটি হত্যা এবং ধর্ষণের চেষ্টার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন এবং এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করেন। একইসঙ্গে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। রায়ে উল্লেখ করা হয়, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকলে তাকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে শাস্তি কার্যকর করতে হবে।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন বিশেষ পিপি রনজুয়ারা সিপু। তিনি বলেন, এই যুগান্তকারী রায়ে বাদী এবং রাষ্ট্রপক্ষ সন্তুষ্ট। আসামির পক্ষে কোনো আইনজীবী না থাকায় আদালত নিয়োগপ্রাপ্ত আইনজীবী এম মজিবুল হক কিসলু মামলাটি পরিচালনা করেন। তিনি জানান, আসামি জেল কোড অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগে আপিল করার অধিকার রাখেন।