নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল ॥
কারাবন্দি নারীর (ভিকটিম) সাথে তদন্ত কমিটির সদস্যরা যেন কথা বলে বক্তব্য গ্রহণ করতে পারেন, সেজন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে। এ কারণে তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে আরও সাতদিন সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে বরিশালের রেঞ্জ ডিআইজি এসএম আক্তরুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সূত্রমতে, উজিরপুর মডেল থানার একটি হত্যা মামলায় নারী আসামিকে রিমান্ডে এনে যৌণ ও শারীরিক নির্যাতনের ঘটনায় বুধবার পুলিশের বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার শেষদিন ছিলো। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে থানার দুই ওসিকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। পাশাপাশি একজন সার্কেল এএসপি এবং থানার ওসিসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ওই নারী।
অপরদিকে নারী আসামি মিনতি বিশ্বাস ওরফে মিতু অধিকারীকে রিমান্ডে নিয়ে যৌণ নির্যাতনের ঘটনাটি ভিন্ন দিকে মোড় নিতে শুরু করেছে। ওই নারীর করা শারীরিক ও যৌণ নির্যাতনের অভিযোগের সত্যতা মেলেনি মেডিকেল রিপোর্টে। এমনকি আঘাতের যে চিহ্ন দেখা গেছে তাও অনেক পুরানো বলে উল্লেখ করা হয়েছে রিপোর্টে।
বরিশাল শেবাচিম হাসপাতাল থেকে গত ৩ জুলাই আদালত এবং পুলিশের কাছে পাঠানো মেডিকেল রিপোর্ট থেকে এ তথ্য জানা গেছে। ওই হাসপাতালের গাইনী বিভাগের ইউনিট-২ এর একজন নারী ইন্ডোর মেডিকেল অফিসার এ মেডিকেল রিপোর্ট তৈরি করেছেন।
তবে মেডিকেল রিপোর্টে কি আছে সে বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন বলে দাবি করেছেন শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ এইচএম সাইফুল ইসলাম। তাছাড়া ঘটনাটি বিচার এবং তদন্তাধীন থাকায় এনিয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
সূত্রমতে, শেবাচিম হাসপাতাল থেকে পাঠানো তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে মিনতি বিশ্বাস ওরফে মিতু অধিকারীর দুই কনুই, গোড়ালিসহ ছয়টি স্থানে ছয় থেকে আটটি আঘাত রয়েছে। তবে সবগুলোই অনেক পুরনো আঘাত। সবমিলিয়ে আঘাতের গুরুত্ব সিম্পল (নরমাল) বলে মেডিকেল রিপোর্টে উল্লেখ করেছেন চিকিৎসক।
মেডিকেল রিপোর্টের বিষয়ে শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ এইচএম সাইফুল ইসলাম বলেন, আদালত নির্দেশে দিয়েছে একজন নারী চিকিৎসক দিয়ে ওই ভিকটিমের পরীক্ষা করে ২৪ ঘন্টার মধ্যে রিপোর্ট দিতে। নির্দেশনা অনুযায়ী নারী চিকিৎসক দিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে। ওই চিকিৎসক মেডিকেল রিপোর্ট খামে ভরে আমাকে দিয়ে গেছেন। তিনি যেভাবে দিয়েছেন সেভাবেই আদালতে পাঠিয়েছি। সুতরাং রিপোর্টে কি আছে সেটা আমার দেখার সুযোগ হয়নি।
সূত্রমতে, গত ২৬ জুন উজিরপুর উপজেলার জামবাড়ি এলাকার মিতু অধিকারীর ভাড়াটিয়া বাসার পাশ থেকে হারতা গ্রামের বাসুদেব চক্রবর্তীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় বাসুদেবের ভাই বরুন চক্রবর্তী বাদী হয়ে উজিরপুর মডেল থানায় নিহতের পরকীয়া প্রেমিকা মিনতি বিশ্বাস ওরফে মিতু অধিকারীকে একমাত্র আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ মিতুকে গ্রেফতার করার পর আদালতের মাধ্যমে রিমান্ড আবেদন করেন। দুইদিনের রিমান্ড শেষে গত ২ জুলাই মিতুকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালতে দাঁড়িয়ে বিচারকের কাছে পুলিশের বিরুদ্ধে শারিরিক ও যৌণ নির্যাতনের অভিযোগ করেন মিতু অধিকারী।