মো. নাঈম হাসান ঈমন, ঝালকাঠি প্রতিনিধিঃঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার সোনারগাও (আরোয়া) হাসানিয়া দাখিল মাদ্রাসার সাবেক সভাপতি মাওলানা আ. রহমান, সুপার মাওলানা আ. সালাম সিকদার ওরফে ইকবাল হোসেন এবং ক্বারী সোয়াইব হোসেনের বিরুদ্ধে দূর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ। এঘটনায় তদন্ত কর্মকর্তা মাদ্রাসা পরিদর্শন করেছেন।
রবিবার (৬ অক্টোবর) দুপুরে অভিযোগের বিষয়ে সরেজমিনে যান তদন্ত কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল। এসময় মাদ্রাসার কর্মরত ৯জন শিক্ষক-শিক্ষিকা, ৪জন কর্মচারী, শিক্ষার্থীরা ও এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন। এর আগে চলতি বছরের ২১শে আগষ্ট এলাকাবাসীর পক্ষে মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মো. আব্দুল হাকিম সিকদার লিখিতভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দেন। এঘটনায় উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মো. মোজাম্মেলকে তদন্ত করে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।
অভিযোগপত্র থেকে জানাগেছে, মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠার পর ১৯৮৫ সালের ২৫শে নভেম্বর স্থানীয় সোয়াইব হোসেন নামে একজন ব্যক্তি এবতেদায়ী ক্বারী হিসেবে প্রতিষ্ঠানে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। পরে ১৯৮৭ সালের ২০শে নভেম্বর প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত সুপার হন৷ এরপরে ২০০০ সালের ১লা জানুয়ারী হতে ২০০৯ সালের ১লা জানুয়ারী পর্যন্ত তার চাকুরী ছিলো না। তিনি জাল জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে ২০১২ সালের ১৯ এপ্রিল অবৈধভাবে বর্তমান সুপার আ. সালাম সিকদারকে নিয়োগ দেন। এরপরে আ. সালাম সিকদার কমিটি ও মঞ্জুরি ছাড়াই জাল জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে অবৈধভাবে পূনরায় সোয়াইব হোসেনকে নিয়োগ দেন। তাছাড়া প্রতিষ্ঠানটিতে ২০০০ সালের ১লা জানুয়ারি হতে পরবর্তী ২০০৯ সালের ৬ অক্টোবর পর্যন্ত কোন কমিটি ছিলো না। অথচ প্রতিষ্ঠানটিতে তখন ২জন শিক্ষক অবৈধভাবে নিয়োগ প্রদান করেন। ২০১০ সালের ৭ এপ্রিল থেকে ২০১২ সালের ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত মাদ্রসার শিক্ষাবোর্ড কোন কমিটি অনুমোদন দেননি। এরপরে ২ বছরের জন্য কমিটি অনুমোদন দিলেও পরবর্তীতে ২০১৪ সালের ৮ জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের ৩০ আগষ্ট পর্যন্ত কোন কমিটি অনুমোদন দেননি। অথচ সুপার আ. সালাম সিকদার তার ভাই মো. আবুল কালামকে সৌদি আরবে থাকা অবস্থায় ২০০৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠানে জুনিয়র মৌলভী পদে মাদ্রাসায় ভুয়া নিয়োগ প্রদান করেন। এছাড়াও ২০১২ সালের ১৯ এপ্রিল সহকারী শিক্ষিকা পদে মোসা. শায়লা পারভীন, সহকারী শিক্ষক পদে মোঃ মাহাবুব হাওলাদার, ও অফিস সহকারী শ্রী তপন কুমারকে নিয়োগ প্রদান করেন। ১০১৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি সহ সুপার পদে মাওলানা আমিনুল ইসলাম, সহকারী মৌলভী পদে মোঃ মাসুম বিল্লাহকে কমিটি ও মঞ্জুরি বিহীন অবস্থায় নিয়োগ প্রদান করেন। এরপর ২০১৬ সালের ৫ আগষ্ট ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী মঞ্জুরি ও কমিটি বিহীন অবস্থায় দপ্তরী পদে মোঃ আলম সিকদার ও নৈশ প্রহরী পদে মোঃ সেলিম সিকদারকে নিয়োগ দেন।
অভিযোগকারী মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মো. আব্দুল হাকিম সিকদার বলেন, ২০০০ সালে সৌদি চলে যায় আবুল কালাম তার নিয়োগ কিভাবে ২০০৪ সালে হয়? মাদ্রাসার নবায়ন এবং কমিটির সভাপতির মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরে মঞ্জুরি বিহীন অবস্থায় যেসকল শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তা বাতিলের দাবি জানাই।আমি যতবারই দূর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেই তদন্ত কর্মকর্তা আসবে বলে আমাকে নোটিশ দিয়ে জানায়। আসার পর বলে আজকে সম্পূর্ণ হয়নি কিছু কাগজপত্র বাকি আছে আগামীদিন আসবো পরে আর আমাকে কিছু জানায় না।
অভিযোগ অস্বীকার করে শিক্ষক মো. আবুল কালাম বলেন, ২০০৪ সালে নিয়োগপ্রপ্ত হওয়ার পর আমার বেতন ভাতা বন্ধ ছিলো। জীবন বাঁচার তাগিদে দেশের বাহিরে চলে যাই। এমপিও ভুক্ত হওয়ার ৬ মাস আগে দেশে এসে মাদ্রাসায় যোগদান করি।
অভিযোগ অস্বীকার করে সুপার মাওলানা আ. সালাম সিকদার ওরফে ইকবাল হোসেন বলেন, ২০১২ সালে মাদ্রাসার সুপার পদে নিয়োগ হয়। এরপর তিনি ৪ থেকে ৫টি নিয়োগ দেন। এই নিয়োগের বিরুদ্ধে সকল দপ্তরে মামলা হইছে। সকল মামলার তদন্ত হইছে আমার বিরুদ্ধে আনা সকল দূর্নীতি ও অনিয়ম মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।
অভিযোগ অস্বীকার করে প্রতিষ্ঠানের সাবেক সভাপতি মাওলানা আ. রহমান বলেন, ডিসি, ইউএনও এবং শিক্ষা অফিসারের অনুমতি নিয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ মিথ্যা।
এবিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মো. মোজাম্মেল বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে মাদ্রাসায় তদন্তের জন্য গিয়ে উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনেছি এবং কাগজপত্র নিয়েছি এসেছি।কিছু কাগজপত্র বাকি আছে সেগুলো দেখে পর্যাচলনা করে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।