মোঃ মোছাদ্দেক হাওলাদার,বরিশাল ॥
বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। সেই সাথে রোগীর চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে বরিশাল শের-ই বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে। সোমবার দুপুর পর্যন্ত ইউনিটটিতে সর্বোচ্চ ২২০ জন রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন। যা করোনা মহামারীর শুরু থেকে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ রেকর্ড।
সূত্রমতে, গত বছর করোনার শুরুতে ৫০ শয্যা নিয়ে যাত্রা শুরু করে শেবাচিমের করোনা ইউনিটটি। রোগীর চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকারি বরাদ্দ না থাকলেও স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় পরবর্তীতে শয্যা সংখ্যা বেড়ে হয় ১৫০ টি। যার মধ্যে ১২টি আইসিইউ এবং ১২টি ভেন্টিলেটর। বর্তমান সময় রোগীর চাপ আরো বেড়ে যাওয়ায় গত ১ জুলাই থেকে শয্যা সংখ্যা বাড়িয়ে ২০০ করা হয়েছে। একই দিন থেকে আরো ১০টি আইসিইউ চালু হয়। আরো দুটি আইসিইউ অপেক্ষমান রয়েছে। তবে গত দুই বছরেও করোনা ইউনিটের জন্য নিয়োগ হয়নি চিকিৎসক-নার্স কিংবা তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণীর জনবল। ফলে রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে চিকিৎসক-নার্সরাও।
মূল হাসপাতাল ভবন থেকে ধার করে আনা চিকিৎসক দিয়ে চলছে করোনা আক্রান্ত এবং উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীদের চিকিৎসাসেবা। তাও আবার সংখ্যায় অপ্রতুল। প্রতিদিন গড়ে ভর্তি থাকা দেড়শ’ রোগীর অনুকূলে চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র দুজন। ৪৫ জন নার্স দায়িত্বে থাকলেও নেই তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণীর সরকারি কর্মচারী। এমন পরিস্থিতিতে করোনার সংক্রমণ ঊর্ধমুখি হওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন শেবাচিম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অতিরিক্ত রোগীর চিকিৎসাসেবা এবং শয্যার ব্যবস্থা করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। তাই সঙ্কট মোকাবেলায় জনবল নিয়োগ, চিকিৎসকের ব্যবস্থার পাশাপাশি সরকারিভাবে শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধির জোর দাবি জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
শেবাচিম হাসপাতালে করোনার তথ্য সংরক্ষক মো.আবু জাকারিয়া খান জানান, শেবাচিমের করোনা ওয়ার্ডে শনিবার রাত ৮টা হতে সোমবার দুপুর ১টা পর্যন্ত ২২০ জন রোগী ভর্তি থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। যা গত দুই বছরের সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড। এর আগে করোনার শুরুতে গত বছরের জুলাই মাসে সর্বোচ্চ ১২১ জন রোগী এক সঙ্গে ভর্তি থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। একই সময় ৫০ জনই পজিটিভ রোগী করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসা গ্রহণ করেন।
হাসপাতালের প্রশাসনিক বিভাগ জানিয়েছে, করোনা ওয়ার্ডের জন্য নির্ধারিত কোনো চিকিৎসক নেই। হাসপাতালের মূল ভবন থেকে দুজন মেডিক্যাল অফিসার এনে করোনা আক্রান্ত এবং আইসোলেশনে থাকা রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া ৪৫ জন নার্স রয়েছেন। যাদের মধ্যে ১৫ জন করে দায়িত্ব পালন করছেন প্রতিদিন। চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী না থাকায় বহিরাগতদের দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে।
হাসপাতালের পরিচালক ডা.এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে শয্যার থেকেও বেশি রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে করোনা ওয়ার্ডে। তবে চিকিৎসা ব্যবস্থার কোনো ত্রুটি হচ্ছে না। পর্যাপ্ত ওষুধ এবং অক্সিজেনের ব্যবস্থা রয়েছে। শুধুমাত্র চিকিৎসক এবং কর্মচারীর অভাব। দীর্ঘ দিন ধরেই করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসক চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠাচ্ছি। কিন্তু কোনো ফলাফল আসছে না। তিনি আরো বলেন, তাছাড়া চাইলেই চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগ সম্ভব নয়। সে জন্য চুক্তিভিত্তিক আড়াই শ’ লোক নেয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। কিন্তু সেটারও কোনো প্রতিউত্তর নেই। ফলে করোনা ইউনিট ব্যবস্থাপনায় অনেকটা হিমশিম খেতে হচ্ছে। সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা আরো বেড়ে গেলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয়ের তথ্যমতে, গত এক বছর চার মাসে বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় মোট ১৮ হাজার ৩৬৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। পাশাপাশি ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৩১৫ জন। তাছাড়া আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১৫ হাজার ১৮১ জন।