জনতার খবর ডেক্সঃ হঠাৎ করেই সুতার মূল্য বৃদ্ধি ও সংকটের কারণে দেশের অন্যতম প্রধান রপ্তানি খাত নিট শিল্পে নতুন করে অশনিসংকেত দেখা দিয়েছে। এ সমস্যার সমাধান না হলে শুধু লোকসানই নয়, নতুন করে বিদেশি ক্রেতাদের কাছ থেকে অর্ডারও বাতিল করে দেওয়ার আশঙ্কা করছেন গার্মেন্ট মালিকরা। এদিকে সুতার মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে নিট গার্মেন্ট মালিক ও স্পিনিং মিল মালিকদের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। নিট গার্মেন্ট মালিকদের বৃহত্তম সংগঠন বিকেএমইএ সভাপতি সেলিম ওসমান এমপির দাবি, স্পিনিং মিল মালিকরা আগের লোকসান পুষিয়ে নিতে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছেন। এতে ব্যক্তি গার্মেন্ট মালিকরা যত না ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, এর চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে রাষ্ট্র। শিগগিরই এ বিষয়ে সমঝোতায় না পৌঁছলে ভবিষ্যতে পাটের মতো নিট শিল্পও ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।
অপরদিকে স্পিনিং মিল মালিকরা বলছেন, সুতার মূল্য বৃদ্ধিতে স্পিনিং মিল মালিকরা দায়ী নন। তুলার মূল্য ও সরবরাহ না থাকায় সুতার দাম বেড়েছে। দেশের সুতা ব্যবসায়ীদের প্রধান সংগঠন বাংলাদেশ ইয়ার্ন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও হাজি হাশেম স্পিনিং মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ সোলায়মান দাবি করেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তুলার দাম বেড়েছে ও সরবরাহ খুব কম থাকায় এ সংকট সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, দেশের সুতা ব্যবসার প্রধান কেন্দ্র নারায়ণগঞ্জে একটি সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে আছে অনেক শিল্প মালিকরা। চোরাই সুতা ও মজুতকারী এই সিন্ডিকেটের কারণে অস্বাভাবিক হয়েছে সুতার বাজার। জানা যায়, আন্তর্জাতিক বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে শীর্ষ তিন দেশের একটি বাংলাদেশ। চলতি মাসের শুরুতে বাংলাদেশকে তৃতীয় স্থানে নামিয়ে পোশাক রপ্তানিতে দ্বিতীয় স্থানে ভিয়েতনাম উঠে এলেও বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রপ্তানি খাত এখনো তৈরি পোশাক। তৈরি পোশাকের ভেতর নিট পণ্যের অংশ প্রায় ৫০ শতাংশ। নারায়ণগঞ্জে পাঁচ শতাধিক তৈরি পোশাক কারখানা রয়েছে। যার বেশির ভাগই নিটওয়্যার প্রস্তুত করে থাকে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, করোনার কারণে চীনের অনেক অর্ডার বাতিল হয়ে সেগুলো বাংলাদেশে আসতে থাকায় আশার আলো দেখেছিলেন দেশের পোশাক কারখানা ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এখন পর্যাপ্ত অর্ডার থাকলেও সুতার মূল্য বৃদ্ধি এবং সংকটের কারণে চাহিদামাফিক পোশাক তৈরি করতে পারছেন না মালিকরা। এতে সামনে অনেক ক্রয়াদেশ বন্ধ হয়ে যাবে বলেও আশঙ্কা করছে রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানগুলো। ব্যবসায়ীদের দাবি, মূলত পোশাক রপ্তানিতে শীর্ষে থাকা চীন ও বাংলাদেশের কতিপয় স্পিনিং মিলের মালিকদের জন্যই এই কৃত্রিম সুতার সংকট ও মূল্য বৃদ্ধি দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে বিকেএমইএ-এর সভাপতি সেলিম ওসমান এমপি যুগান্তরকে বলেন, সুতার মূল্য প্রধানত তুলার ওপর নির্ভর করে। দেশে বেশির ভাগ তুলা আমদানি হতো উজবেকিস্তান থেকে। কিন্তু তারাই সেখানে প্রচুর স্পিনিং মিল তৈরি করায় তুলা সেখান থেকে আসছে না। পাশাপাশি চীনও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে অতিরিক্ত তুলা ও সুতা মজুত করেছে। গত কয়েক বছর এসব কারণে দেশের স্পিনিং মিল মালিকরা লোকসান গুনেছেন। ফলে এখন যখন সুতার সংকট, তারা মোনোপলি ব্যবসার সুযোগ নিয়ে আগের লোকসান পূরণ করতে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছেন। এটা পুরোপুরি অনুচিত। কারণ, তাদের কাছে রিজার্ভ তুলা থাকে। ওই তুলার ও তৈরি সুতার সঙ্গে দাম বৃদ্ধি করে ফেলেছে।
অন্যদিকে বিদেশি ক্রেতারা আন্তর্জাতিক বাজার দেখে তৈরি পোশাকের মূল্য নির্ধারণ করে। ক্রেতারা সেটি বিচার করে। আমাদের কাছে প্রচুর অর্ডার থাকলেও আমরা সেগুলো নিতে পারছি না। এতে ব্যক্তি গার্মেন্টস যা ক্ষতি হচ্ছে, এর চেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে রাষ্ট্রের। ফলে বাজার অন্যদিকে মোড় নিচ্ছে। তার ওপর বর্তমানে জাহাজ বা কনটেইনার জটিলতা রয়েছে। আগে যেটির ভাড়া ছিল ৫ হাজার ডলার, এখন সেটির ভাড়া ১৫ হাজার ডলার। এটাও একটি কৃত্রিম সংকটের কারণ। ফলে সুতা ও কনটেইনারের ভাড়া বাড়ায় আমরা ক্রেতাদের নির্ধারিত মূল্যে অর্ডার নিতে পারছি না। তবে সেলিম ওসমান এমপি বলেন, এখন মার্কেট ওঠার সময়। আমাদের একে অপরকে বুঝতে হবে। লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের স্বার্থে একটি সমঝোতায় আসা উচিত। কয়েকদিনের মধ্যেই বিষয়টি নিয়ে একটি জরুরি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। আশা করছি, এ ব্যাপারে সুষ্ঠু একটি সমাধান ও সমঝোতা হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ ইয়ার্ন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও হাজি হাশেম স্পিনিং মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন, ‘সুতার সংকট স্পিনিং মিলের মালিকরা তৈরি করেননি। এটা তুলার দাম ও সরবরাহের ওপর নির্ভরশীল। আন্তর্জাতিক বাজারে তুলার দাম বেড়েছে ও সরবরাহ খুব কম। কীভাবে সুতা তৈরি করব, আগামী তিন মাস পর্যন্ত তুলার কোনো এলসি নেবে না। তিন মাস পর এলসি খুললেও সেই সুতা হাতে পাব সামনের বছর। কীভাবে তাহলে সুতার সরবরাহ বাড়াব।’