মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জান্তা বাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে নতুন করে আর কোনো সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়নি এখন পর্যন্ত। তবে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে সেখানে। দুদিনের তুমুল লড়াইয়ের পর আতঙ্কগ্রস্ত সাধারণ রোহিঙ্গারা রাজ্য ছাড়ার চেষ্টা করছে জীবন বাঁচাতে। ইতোমধ্যে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে কঠোর অবস্থানে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। এমন পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গারা যাতে নতুন করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ না করে, সে জন্য সীমান্তে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে বিজিবিও।
গত শুক্রবার রাখাইনের বুচিডং ও ফুমালি এলাকায় জান্তা বাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হয়। দুইপক্ষের লড়াইয়ে প্রাণ যায় অনেক রোহিঙ্গার, আহত হয় অনেকে। এতে আবারও নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে রাখাইনের রোহিঙ্গাদের মধ্যে। রাখাইন ও কক্সবাজারের স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকালও রোহিঙ্গারা প্রাণ বাঁচাতে এদিক-সেদিক যাওয়ার চেষ্টা করেছে।
সূত্রগুলো আরও জানিয়েছে, রাখাইনে চলমান সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে রোহিঙ্গারা বিচ্ছিন্নভাবে দু-এক দিন ধরে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেছে। তবে সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার হওয়ায় তারা পুনরায় তাদের আদিনিবাসে ফিরে গেছে।
এ ছাড়াও রেডিও ফ্রি এশিয়ার এক প্রতিবেদন বলছে, আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর লড়াইয়ের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে রাখাইনের কয়েক হাজার অধিবাসী রাজ্য ছেড়ে চলে গেছেন। দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ তীব্র হতে পারে—এমন আশঙ্কায় লোকজন এলাকা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন।
এমন পরিস্থিতিতে শনিবার (২৭ জানুয়ারি) দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সাংবাদিকরা নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের শঙ্কা নিয়ে প্রশ্ন রাখেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সামনে। জবাবে তিনি বলেন, ‘মানবতার কারণে রোহিঙ্গাদের তখন স্থান দিয়েছিলাম। যেসব রোহিঙ্গা আমাদের দেশে এসেছে, তাদের কারণে এখানে নিরাপত্তা ও পরিবেশগত সমস্যা তৈরি হয়েছে। শিবিরগুলো উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বিস্তারের উর্বর ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। এ ছাড়া সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো রোহিঙ্গা শিবির থেকে তাদের সদস্য নিয়োগ করার চেষ্টা করে।’
আর একজন রোহিঙ্গাকে অনুপ্রবেশ করতে দেওয়া হবে না জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি, সেটি আজকে হঠাৎ করে হয়নি। বেশ কিছুদিন ধরেই উত্তেজনা চলছে। আমাদের সীমান্তরক্ষীরা অনেক আগে থেকেই সেখানে সতর্ক রয়েছেন।
জানা গেছে, রাখাইনে দুই পক্ষের তুমুল লড়াইয়ের প্রেক্ষিতে বান্দরবান সীমান্ত এলাকা থেকে বিজিবির একটি অংশকে কক্সবাজার জেলার মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় মোতায়েন করে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে টেকনাফ-২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, সীমান্তে বিজিবি কঠোর অবস্থানে রয়েছে। নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কোনো ধরনের সুযোগ নেই।