প্রবল বর্ষণের ফলে রাঙামাটিতে ২০১৭ সালের ১৩ জুন সেনাবাহিনীর সদস্যসহ ১২০ জন এবং পরের বছর ২০১৮ সালের ১১ জুন রাঙামাটির নানিয়ারচরে ভূমি ধস ও পাহাড়ি ঢলে ২ শিশুসহ ১১জন, সর্বশেষ ২০১৯ সালের জুনে জেলার কাপ্তাইয়ে তিনজনের প্রাণহানির ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে এ বছর না ঘটে সেই লক্ষ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে রাঙামাটির জেলা প্রশাসন কর্তৃপক্ষ।
রোববার(৬ জুন) সারাদিন চলমান বৃষ্টিময় পরিস্থিতিতে পাহাড় ধসসহ সম্ভাব্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসন কর্তৃপক্ষ। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিকে নিয়ে জরুরি সভা আহ্বান করে রোববার দিনের শেষেও সংশ্লিষ্ট সকল স্তুরের কর্মকর্তাদের নিজ নিজ অফিসে উপস্থিত থাকতে নির্দেশনা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান।
রোববার বিকেলে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে একটি টিম শহরের বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো সরেজমিনে পরিদর্শন করে সেগুলোতে বসবাসকৃত পরিবারগুলোকে নিরাপদ আশ্রয়ে এবং সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে চলে যাওয়ার নির্দেশনা প্রদান করেছে। জেলা প্রশাসনের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের ছুটি বাতিল করে নিজ নিজ কর্মস্থলে থাকার নির্দেশনা প্রদান করেছেন জেলা প্রশাসক।
জেলার প্রতিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকাসহ উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। প্রত্যেকটি উপজেলা সদরে ইউএনও অফিসে বিশেষ কন্ট্রোল রুম খোলা রাখা হয়েছে। রাঙামাটি জেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে তাদের অধিনস্থ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহকে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে খুলে রাখতে সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী রাঙামাটি রিজিয়ন ও সদর জোনের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকের সাথে যোগাযোগ করে দুর্যোগকালীন সময়ে প্রয়োজনীয় সার্বিক সহযোগিতা করতে একাধিক সেনাটিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে নিশ্চিত করা হয়েছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষায় করণীয় নিয়ে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানোর জন্য রেডিও, টেলিভিশন ও জেলা তথ্য অফিসকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। জেলার ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ, রেডক্রিসেন্ট, রোভার স্কাউটসহ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকে সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে বলা হয়েছে।
রাঙামাটির জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা মো. রুকনুজ্জামান জানিয়েছেন, চলমান পরিস্থিতিতে এবং সম্ভাব্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় ১৩০ মেট্রিক টন চাল, শতাধিক তাবু ও নগদ ১২ লাখ টাকাসহ পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রস্তুতি রয়েছে। প্রয়োজনে তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় বাজার থেকে প্রয়োজনীয় খাদ্য শস্য ক্রয় করে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা হবে।
রাঙামাটি জেলা শহর ও বিভিন্ন উপজেলায় ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বাড়ি নির্মাণ কাজ বন্ধ না হওয়ায় প্রায় ১৫ হাজার পরিবার পাহাড় ধসের আশংকায় রয়েছে। জেলা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা থাকা স্বার্থেও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা গুলোতে দিন দিন গড়ে উঠছে নতুন নতুন অবৈধ স্থাপনা। রাঙামাটি শহরের প্রবেশ মুখ মানিকছড়ি হতে রেডিও স্টেশন পর্যন্ত প্রধান সড়কের দু’পাশে গড়ে উঠেছে নতুন নতুন অবৈধ স্থাপনা।
শুধু পৌরসভাধীন নয়টি ওয়ার্ডের ৩৪টি এলাকায় ৫ শতাধিকের বেশি পরিবারের ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় বসবাসের কথা জেলা প্রশাসনই চিহ্নিত করেছে। গত দুই দিন ধরে রাঙামাটিতে শুরু হওয়ায় বৃষ্টি স্থানীয় জনসাধারণকে নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে এসব এলাকায় প্রবল বর্ষণে যে কোনো মুহূর্তে ২০১৭ সালের ১৩ জুনের ভয়াল পাহাড় ধসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ পুনরাবৃত্তি ঘটার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, আপনারা অবশ্যই অবগত আছেন সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে পাহাড় ধস নিয়ে ইতিমধ্যে জনসচেতনতামূলক মাইকিং,লিফলেট বিতরণ ও নিষিদ্ধ এলাকায় সাইন বোড স্থাপন করা হয়েছে। জনগণ যদি আইন অমান্য করে তাহলে পুলিশ দিয়ে ধরে এনে আশ্রয় কেন্দ্রে রাখা হবে। পাহাড় ধস সম্পর্কে জেলা প্রশাসনের আগাম প্রস্তুতি রয়েছে। তার পরও জেলা প্রশাসন সবাইকে সাথে নিয়ে পাহাড় ধস মোকাবিলা করবো।
এদিকে পাহাড়ে দেড় দশকের পর দশক ধরে সেগুন বাগানের পাশাপাশি আদা ও হলুদ চাষ চলছে ব্যাপক হারে। এই চাষে পাহাড়ের উপরিস্তর ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। এতে পাহাড় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে বলে সরকারি নানা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হলে এসব সুপারিশের কোনো বাস্তবায়ন ঘটেনি।