কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ
জালিয়াতি করে ৫ জন দিনমজুরের ব্যাংক একাউন্টে আড়াই কোটি পাঠিয়ে তা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছিল এক প্রতারক চক্র। প্রতারকরা সেই টাকা তুলতে না পারলেও ফেঁসে গেছেন ৫ দিনমজুর। যাদের ৪ জন এখন কারাগারে। আর পালিয়ে বেড়াচ্ছেন অন্যজন। কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের নওদাবশ গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে।
সোনালী ব্যাংক থেকে ২ কোটি ৪৬ লাখ ৯ হাজার ৯৬০ টাকা জালিয়াতির অভিযোগে ওই দিনমজুরসহ ৯ জনের নামে মামলা হয়েছে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানায়।
৫ জন দিনমজুরের মধ্যে ফুলমনি রানী, কমল চন্দ্র রায়, প্রভাস চন্দ্র রায় ও রনজিত কুমার রায় এখন কারাগারে। তারা রয়েছেন গাজীপুর জেলা কারাগারে। বাড়ি ছাড়া হয়েছেন সুবল চন্দ্র মোহন্ত নামের এক দিনমজুর।
গত ২ জুলাই সকালে ফুলবাড়ী থানা পুলিশের সহযোগিতায় গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানার পুলিশের একটি টিম অসহায় চার দিনমজুরকে তাদের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে। ১ জুলাই গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানায় একটি মামলা করেন শ্রীপুর সোনালী ব্যাংকের হেডকোয়ার্টার শাখার ব্যবস্থাপক রেজাউল হক। মামলায় ৫ দিনমজুরসহ আসামী করা হয়েছে প্রতারক চক্রের সদস্য শ্রীপুর উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা বজলুর রশিদ, হিসারক্ষন অফিসের অডিটর আরিফুর রহমান, মাস্টাররোল কর্মচারী তানভীর ইসলাম স্বপন ও ঢাকার উত্তরখান জামতলা এলাকার শাহেনা আক্তারকে।
জানা যায়, শ্রীপুর উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের মাস্টারোল কর্মচারী কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলার বাসিন্দা তানভীর ইসলাম স্বপন (৩২) করোনায় সরকারি প্রণোদনা পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখান এসব দিনমজুরদের। ১৬ জুন ৫ দিনমজুরকে নিয়ে যান সোনালী ব্যাংকের নাগেশ্বরী শাখায়। সেখানে তাদের নামে ব্যাংক হিসাব চালু করেন। এসব দিনমজুরদের শ্রীপুরে নিয়ে গিয়ে ব্যাংকের চেক বই ও বিভিন্ন কাগজপত্রে সহি ও টিপসহি নেন। এরপর তাদের কাছ থেকে নিয়ে নেন ব্যাংকের সব কাগজপত্র ও চেক বই। ব্যাংক একাউন্টে প্রণোদনার টাকা পাঠানো হবে এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের বাড়ি পাঠিয়ে দেন। প্রণোদনার টাকা পাওয়ার প্রত্যাশায় দিনমজুরেরা প্রতারক চক্রের সদস্য স্বপনের সবকথা বিশ্বাস করেন নির্দ্বিধায়।
দিনমজুর সুবল চন্দ্র মোহন্তের সাথে মোবাইলে কথা হলে তিনি একাত্তরকে জানান, তারা গাজীপুর ও শ্রীপুর কোনদিন যাননি। তানভীর ইসলাম স্বপনই তাদের নিয়ে গেছেন।
সোনালী ব্যাংক নাগেশ্বরী শাখার ব্যবস্থাপক শরিফুল আজম জানান, ব্যাংক হিসাব চালুর কিছুদিন পর ৫ জন দিনমজুরের একাউন্ট নম্বরে ২ কোটি ৪৬ লাখ ৯ হাজার ৯৬০ টাকা চলে আসে। এসব টাকা আসে সোনালী ব্যাংক হেড কোয়ার্টার শাখা থেকে। এর মধ্যে রণজিতের সঞ্চয়ী একাউন্টে ৪৮ লাখ ৪৫ হাজার ৭২০ টাকা, প্রভাসের একাউন্টে ৬৫ লাখ ৭২ হাজার ১২০ টাকা, সুবলের একাউন্টে ৪০ লাখ ৭১ হাজার ৭২০ টাকা, কমলের একাউন্টে ৪২ লাখ ৪৯ হাজার ৮৮০ টাকা এবং ফুলমণি রানীর একাউন্টে ৪৮ লাখ ৭০ হাজার ৫২০ টাকা। সোনালী ব্যাংক নাগেশ্বরী শাখার ব্যবস্থাপক শরিফুল আজম জানান আরও জানান, ৩-৪ জন লোক একাউন্ট থেকে টাকা তুলতে আসলে তার সন্দেহ হয় এবং শ্রীপুর হেডকোয়ার্টার শাখায় যোগাযোগ করে টাকা উত্তোলন বন্ধ করা হয়। কিন্তু লোকগুলোকে আটক করার আগেই তারা ব্যাংক থেকে সটকে পড়েন।
বড়ভিটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খয়বর আলী জানান, গ্রেপ্তারকৃত দিনমজুররা সম্পূর্ণ নির্দোষ। তাদের সরলতাকে পুঁজি করে প্রতারক চক্র তাদের সর্বনাশ করেছে। তিনি তদন্ত সাপেক্ষে দিনমজুরদের মুক্তি দেয়ার দাবী জানান।
ফুলবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তদন্ত সারওয়ার পারভেজ জানান, শ্রীপুর থানা আমাদের কাছে সহযোগীতা চেয়েছে এবং আসামী আমাদের ফুলবাড়ী উপজেলায় হওয়ায় চার আসামীকে গ্রেফতারের সহযোগিতা করা হয়েছে।