জনতার খবর ডেক্সঃ নিউ ইয়র্কের বাঙালি অধ্যুষিত জ্যাকসন হাইটসের সুপরিচিত চিকিৎসক ডা. ফেরদৌস খন্দকারের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগে মামলা করেছেন কুইন্স এলাকার পাঁচ নারী। বিভিন্ন সময়ে রোগীদের যৌন নির্যাতন, অকারণে বুক স্পর্শ করা, এমনকি ১৪ বছরের কম বয়সী মেয়েদের অযৌক্তিক স্তন পরীক্ষাসহ নানাভাবে নারী রোগীদের হয়রানির অভিযোগে কুইন্স সুপ্রিম কোর্টে এ মামলা দায়ের করা হয়।
কুইন্স সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা মামলার বরাত দিয়ে গণমাধ্যম জানায়, ডা. ফেরদৌস গত দুই দশক ধরে অকারণে নারী রোগীদের বুক স্পর্শ করাসহ নানাভাবে যৌন হয়রানি করে যাচ্ছেন।
পাঁচ নারী অভিযোগ করেন, দুই দশক ব্যাপী ঘটনাগুলিতে খন্দকার ফেরদৌস তাদের বুক স্পর্শ করেছিল। এমনকি সামান্য গলাব্যথার মতো উপসর্গ নিয়ে তার কাছে গেলেও অযাচিতভাবে স্পর্শকাতর অঙ্গে হাত দেয়ার পাশাপাশি অনেক সময় তাদেরকে আংশিক পোশাক খোলার নির্দেশ দিয়েছিলেন ডা. ফেরদৌস।
অভিযোগে ডা. ফেরদৌস খন্দকারকে একজন ‘সিরিয়াল যৌন শিকারী’ হিসেবে অভিযুক্ত করে বলা হয়, যিনি কয়েক দশক ধরে চিকিৎসা সেবা প্রদানের নামে কয়েক ডজন নারী ও তরুণীকে যৌন নিপীড়ন ও হয়রানি করেছেন।
গত বছর কয়েকজন মহিলা ডা. ফেরদৌসের অশোভন আচরণের বিরুদ্ধে অনলাইনে পোস্ট দিয়ে প্রতিবাদ করায় তিনি তিনজনের বিরুদ্ধে ১০ লাখ ডলারের মানহানির মামলা দায়ের করেছিলেন। আদালত মামলাটি খারিজ করে দিয়ে বিবাদির আইনজীবীর পারিশ্রমিক পরিশোধ করার জন্য ডা. ফেরদৌস খন্দকারকে নির্দেশ দেন। সে প্রেক্ষাপটে তার বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করা হলো।
ওই পাঁচ নারীর প্রতিনিধিত্বকারী আইনজীবী সুসান ক্রুমিলার বলেন, মানহানির মামলা করার জন্য ডা. খন্দকারকে বাকি জীবন অনুশোচনা করে যেতে হবে। খন্দকার মনে করেছিলেন, তিনি মামলা করলে তার হয়রানির শিকার নারীরা চুপসে যাবেন। কিন্তু হিতে বিপরীত হয়েছে। অবমাননার শিকার অন্যান্য নারীরাও এখন এগিয়ে এসেছেন।
কয়েক মাস আগে নিউ ইয়র্কের ২৩ বছর বয়সী এক নারী ডা. খন্দকারের চেম্বারে চিকিৎসা সংক্রান্ত পরামর্শ নিতে গেলে সেখানে ‘যৌন হয়রানির শিকার হন’ বলে অভিযোগ আনেন। পরে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘নিগ্রহের’ কথা জানান।
তার ওই পোস্টের পর আরও ক’জন নারী একই অভিযোগে সরব হন।
পরে ডা. খন্দকারের মেডিকেল সনদ বাতিলের আহ্বান জানিয়ে তারা চেঞ্জ.অর্গ পিটিশন করেন, যাতে সাড়ে চার হাজারের বেশি লোক স্বাক্ষর করেন।
‘নিগ্রহের’ অভিযোগ আনা একজন নারী বলেন, ওই ঘটনা কয়েক দিন পর্যন্ত আমার কাছে দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আমার বয়স ছিল খুবই কম। কিভাবে বলতে হবে, বুঝতে পারছিলাম না। আবার আমি একেবারে অজ্ঞও ছিলাম না। আমি জানতাম, এভাবে কোনো চিকিৎসক কাউকে পরীক্ষা করে না। আমি বুঝতে পারছিলাম, আমার সাথে কিছু একটা হয়েছে। ওই সময় আমার কথাগুলো শেয়ার করতে প্রস্তুত ছিলাম না।
তার বিরুদ্ধে নারীদের এমন অভিযোগের খবর নিউ ইয়র্কের পত্রিকা দ্য সিটি, জ্যাকসন হাইটস পোস্ট এবং কমিউনিটির বাংলা ভাষার পত্রিকা সাপ্তাহিক নবযুগ এবং আজকালে প্রকাশিত হয়েছে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. ফেরদৌস খন্দকার বলেন, ‘এই নিউজটি কী করতেই হবে? বিষয়টি অনেক পুরনো। বিষয়টি পরিকল্পিতভাবে আবার সামনে আনা হয়েছে।’
উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের শুরুর দিকে দেশের মানুষের সেবা করার জন্য ডা. ফেরদৌস খন্দকার বাংলাদেশে ছুটে এসেছিলেন। কিন্তু তাকে বঙ্গবন্ধু হত্যার কুশীলব খন্দকার মোশতাকের ভাতিজা ও বঙ্গবন্ধুর খুনী কর্নেল রশিদের খালাতো ভাই হিসেবে প্রচারের পর নানা জটিলতায় তিনি নিউইয়র্ক ফিরে যান। তবে করোনাকালীন নিউইয়র্কের মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে ডা. ফেরদৌস খন্দকার ব্যাপক প্রসংশীত হয়েছিলেন।