ঝালকাঠি প্রতিনিধিঃ
লাল-সবুজের পতাকা খচিত বিশ্ব-মানচিত্রে সার্বভৌম দেশ অর্জনে পাক-বাহিনী বিরোধী দুঃসাহসী লড়াকু এক বীর মুক্তিযোদ্ধা এখন অসুস্থ হয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে অসহায় জীবন-যাপন করছেন। বলছি, ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার রায়পাশা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা খান মতিউর রহমানের কথা। বার্ধক্যজনিত কারণে উপার্জনের ক্ষমতা হারিয়ে জীবন সংগ্রামে যেন পরাজিত হয়েছের এ বীরে।
দেশ স্বাধীন করতে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বরিশাল অঞ্চলে স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালে ৯ নম্বর সেক্টরে অংশ নিয়ে যে হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা খান মতিউর রহমান,সেই হাত এখন আসাড়, স্টক করে চরম অসহায়।পরিবার পরিজন নিয়ে বেহাল-দশায় দির পাড় করছেন। তবে নেই কোন আক্ষেপ। ঝালকাঠির এই মুক্তিযোদ্ধা চাচৈর রণাঙ্গনের সম্মুখ মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধারা এখানকার মতো সাফল্য সাথে ৯ নং সেক্টরের অন্য কোথাও পাননি। চাচৈর ছাড়া আশপাশের কয়েকটি গ্রামেও যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়লে ১৩ নভেম্বর সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন ওমরের নেতৃত্বে
মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি গ্রæপ যুদ্ধে অংশ নেয়। এ যুদ্ধে আবদুল আউয়াল নামের এক মুক্তিযোদ্ধা ও দুই শিশুসহ পাঁচজন মারা যান। অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে শতাধিক পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকার নিহত হয়। স্বাধীনতার ৫ দশক পরও ঐতিহাসিক চাচৈর রণাঙ্গনের স্মৃতি ধরে রাখতে আজ পর্যন্ত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে খান মতিউর রহমান যে ভাতা পান, তার সিংহভাগই চলে যায় চিকিৎসায়। এ মুক্তিযোদ্ধার চিকিৎসা করাতে হিমশিম খাচ্ছেন পরিবার। দুই মেয়ে ও এক ছেলে স্ত্রী নিয়ে ৫ জনের সংসার। ছেলে মেয়েদের কোন সরকারি চাকরি হয়নি। নিজের থাকার মত আছে কেবলমাত্র একটি বাড়ি। চার বছর আগে স্টক করলে শরীরের শক্তি হারিয়েছেন এই বীর। এখন স্পষ্ট ভাবে কথা বলতেও পারেন না। সন্তানদের চাকরি বা উপার্জন ক্ষম কেউ না থাকায় কথা জানান মেয়ে শারমিন রহমান মুক্তা। মুক্তিযোদ্ধার চিকিৎসা করাতে হিমশিম খাচ্ছেন পরিবার।
শুধু খান মতিউর রহমান নয়, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মফিজ উদ্দিনের পরিবারও চরম অসহায় অর্থাভাবে দিন পার করছে।বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মফিজ উদ্দিনের ছেলে এখন রেন্টে মোটরসাইকেল চালক। রেন্টে মোটরসাইকেল চালিয়ে চলে সংসার।বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মফিজ উদ্দিনের মৃত্যুর পরে নানা জটিলতায় বন্ধ রয়েছে তার ভাতা। এই বীর মুক্তিযোদ্ধা চেয়েছিলেন পাকিস্তানিদের শোষণ নিপীড়ন থেকে মুক্তি পেতে। বৈষম্যহীন একটি দেশের জন্য জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন তাই। জীবন সায়েহ্নে আসা রোগ শোক আর দারিদ্রে অসহায় একাত্তরের এ বীর সরকারে কাছে রক্তে অর্জিত মহান স্বাধীনতার প্রকৃত উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের দাবী করেছেন।