কৃষি ডেক্সঃ কৃষক আরুনি সরকার এক দশক আগে ফিলিপাইনের কৃষিবিজ্ঞানী বংকায়া বানের কাছে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন । ১০ ধরনের স্থানীয় আমন ধান উদ্ভাবন করেছেন আরনি। আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না পেলেও তাঁর উদ্ভাবিত ধানগুলোর মধ্যে ছয় ধরনের ধান চাষাবাদ করছেন কৃষকেরা।
খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার গঙ্গারামপুর গ্রামে। ৪২ বছরের আরুনির পড়াশোনা মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোয়নি। তাতে কি, স্থানীয় মানুষদের কাছে এই আরুনি সরকারই যে ‘ধান গবেষক’। ১০ বছরের চেষ্টায় সংকারায়ণ করে তিনি ১০ ধরনের নতুন ধান উদ্ভাবন করেছেন। এগুলোর মধ্যে ছয় রকমের ধান এবার স্থানীয়ভাবে চাষ করা হচ্ছে।
আরুনি সরকারের উদ্ভাবিত ধানগুলো উপকূলীয় অঞ্চলের লবণাক্ততা ও জলাবদ্ধতা সইতে পারে। ফলনও ভালো। তুলনামূলক কম কীটনাশক ও সার প্রয়োগ করতে হয়। দুই বছর আগে যখন খুলনা অঞ্চলে ‘কারেন্ট’ পোকার (বাদামি গাছফড়িং বা গুনগুনি পোকা) আক্রমণে অধিকাংশ খেতের ধান নষ্ট হয়ে যায়, তখনো খেতে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিল আরুনির ধান। যা দেখে আশপাশের কৃষকদের আগ্রহ বাড়ে। আরুনির কাজকে তাঁর ভাই তরুণিকান্ত সরকার ‘পাগলামি’ মনে করতেন। সেই ঘটনার পর তিনিও শুরু করেছেন আরুনির উদ্ভাবিত ধান চাষ।
দেশীয় প্রজাতির ২০টি আমন ধানের জাত নির্বাচন করেন কৃষকেরা। ওই জাতগুলোর মধ্যে ১০টিকে মাদার বা মা এবং ১০টি জাতকে ফাদার বা বাবা হিসেবে নিয়ে শুরু হয় আরুনির গবেষণা। প্রথম বছরই কৃত্রিম পরাগায়নের মাধ্যমে স্বল্প পরিসরে ১০ ধরনের ধানের বীজ তৈরি করা হয়। পরের বছর থেকে ওই বীজগুলো খেতে লাগিয়ে ধরন নির্ধারণের চেষ্টা চলে। আট বছর ধরে এসব ধানের ফলন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে টিকে থাকার ক্ষমতা নিয়ে মাঠপর্যায়ে গবেষণা শুরু হয়। দীর্ঘ গবেষণা শেষে ছয়টি ধরনকে উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য চাষাবাদ উপযোগী হিসেবে স্বীকৃতি দেন কৃষকেরা। এগুলোর বীজ এ বছর স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।
আরুনি সরকার বলেন, ‘গবেষণায় দেখা গেছে, ওই ছয় ধরনের ধান স্থানীয় ও উচ্চফলনশীল ধানের চেয়েও ভালো ফলন দিচ্ছে। ১০ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত জলাবদ্ধতায় টিকে থাকতে পারে। ধানগাছগুলো তুলনামূলক মোটা হওয়ায় বাতাসে পড়ে যাওয়ার ভয় নেই।’ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় আরুণির গবেষণা প্লটের ধান দেখে অনেক কৃষক মুগ্ধ হয়েছেন। নতুন ছয়টি ধান কৃষকদের কোনো উপকারে এলে তবেই ১০ বছরের গবেষণা সার্থক হবে বলে মনে করেন আরুনি সরকার।