জনতার খবর ডেক্সঃ তালেবানরা কাবুল দখল করে নিয়েছে। আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি দেশত্যাগ করেছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতি সম্পর্কে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ। দেশটিতে উদ্ভূত এ পরিস্থিতিতে দেশটির ‘জনগণের ইচ্ছার’ প্রতি ঢাকার পূর্ণ সমর্থন থাকবে বলে ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ।
ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) মাশফি বিনতে শামস রোববার রাতে একটি জাতীয় পত্রিকায় দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, আমরা আফগানিস্তানের জনগণের সঙ্গে আছি। আমরা অতীতেও আফগানিস্তানের জনগণের সঙ্গে কাজ করেছি। ভবিষ্যতেও আফগান জনগণের রায়ের প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন থাকবে।
ঢাকা গোটা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আমরা সর্বদা আফগানিস্তানে শান্তি ও স্থিতিশীলতা চাই। আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার পক্ষে আমাদের অবস্থান।
এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন শনিবার জানান, আফগানিস্তানে তালেবান কিংবা সরকার কারও সঙ্গে আমাদের কোনো ঝগড়া নেই।
ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অপর এক কর্মকর্তা বলেছেন, আফগানিস্তানে র্যাডিক্যাল ট্রান্সফরমেশন এবং এই অঞ্চলে ক্ষমতার ভারসাম্যের বিষয়টি বাংলাদেশ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। আফগানিস্তানে বিদেশি অধিগ্রহণ ও প্রত্যাহারও আমাদের পর্যবেক্ষণে রয়েছে।
প্রতিক্রিয়ায় এও বলা হয় যে, আফগানিস্তানে শান্তি ও স্থিতিশীলতা খুবই প্রয়োজন। দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নের জন্য একত্রিত নীতি গ্রহণ করা প্রয়োজন। আফগানিস্তানের পুনর্গঠন ও উন্নয়নে অংশ নিতে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশ সম্পৃক্ত থাকবে। ২০০৭ সালে আফগানিস্তান সার্কের সদস্য হওয়ার সময়ও বাংলাদেশ সমর্থন দিয়েছিল। আফগানিস্তানে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশন ছিল। সোভিয়েত অধিগ্রহণের পর নিরাপত্তাজনিত কারণে মিশন প্রত্যাহার করা হয়। দেশটিতে নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি হলে দূতাবাস চালু করবে বাংলাদেশ।
ঢাকার ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আফগানিস্তান তার নিজের গন্তব্য নিজেই নির্ধারণ করবে বলে দেশটির প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি যে মন্তব্য করেছেন; বাংলাদেশ একে স্বাগত জানায়। বাংলাদেশ এ-ও মনে করে, তালেবানরাও আফগান সমাজের অংশ। ফলে দুপক্ষের মধ্যে দোহায় আলোচনার পাশাপাশি নিরপেক্ষ সংস্থা হিসাবে জাতিসংঘের অধিকতর ভূমিকা বাংলাদেশ প্রত্যাশা করে। সিল্ক রোডের গুরুত্বপূর্ণ সংযোগস্থলে আফগানিস্তানের অর্থনীতির নতুন অবয়বও বাংলাদেশ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। আফগানিস্তানের ভৌগোলিক অখণ্ডতাও বাংলাদেশ বিশ্বাস করে।’
তিনি বলেন, ‘আফগানিস্তানে স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ মৌলিক আর্থ-সামাজিক অনেক বিষয়ে বাংলাদেশ কাজ করতে আগ্রহী। তবে এসব কাজের পূর্বশর্ত হলো দেশটিতে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করার প্রতিও বাংলাদেশের সমর্থন রয়েছে।’
উল্লেখ্য, ঢাকায় আফগানিস্তানের দূতাবাস রয়েছে। বিগত তালেবান আমলে ঢাকায় আগের সরকারের প্রতিনিধি ‘চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স’ (সিডিএ) হিসাবে কাজ করেছেন। তালেবানের কোনো প্রতিনিধি বাংলাদেশে আসেননি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাকিস্তান থেকে অনেক বাংলাদেশি আফগানিস্তানে পালিয়ে আশ্রয় নিলে আফগান জনগণ তাদের সাদরে গ্রহণ করে। স্বাধীনতার পর সত্তরের দশকে রেডক্রস ও ইউএনএইচসিআর আফগান বিমান ভাড়া করে পাকিস্তানে আটকেপড়া বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনে।