একটি জাতিকে নেতা শূণ্য করার জন্য, একটি জাতিকে তার ইতিহাস ভুলিয়ে দেওয়ার জন্য একটি জাতিকে বীরত্ব গাথা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে মুছে দেওয়ার নিমিত্তে যে দেশি বিদেশী ষড়যন্ত্র হয়েছিল, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট নারকীয় হত্যাকান্ড তারই প্রকাশ পায়। বেশ কিছু বিপদগামী সেনা সদস্য সপরিবারে জাতির পিতাকে হত্যা করে এদেশের পরাজিত শক্তিকে পূণনূত্থানের যে স্বপ্ন দেখেছিল তা এই জাতি পূরণ করতে দেয়নি। সেদিনের সেই হত্যাকান্ড ছিল জাতির ইতিহাসে এক বড় কলংক। দেশের স্থপিত ও নির্বাচিত রাষ্ট্র প্রধানকে তার পরিবারের সদস্যসহ এমন ভয়াবহভাবে হত্যার ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।
২৫ বছর পাকশাসনের আদলে এই দেশ শাসিত করেছে সেনা স্বৈরতন্ত্র এবং তাদের উত্তরসূরীরা। এাঁ স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ যে, মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসের সময় বঙ্গবন্ধুর বিরূদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র হয়েছিল। খন্দকার মোস্তাকের মত বিশ্বাসঘাতকেরা পেতেরয়েছিল বঙ্গবন্ধুহীন এক রাষ্ট্র তৈরীর। কিন্তু বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু দুটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। বঙ্গবন্ধু ব্যতীত বাংলাদেশ, আর বাংলাদেশ ছাড়া বঙ্গবন্ধু ভাবা অসম্ভব। পাকিস্তান শাসনামলে যিনি বিভিন্ন কারণে অকারণে ১২ বার জেলে গেছেন। ক্ষমতার মোহ তাকে কখনো টানেনি। রাষ্ট্রপ্রধান ও প্রধানমন্ত্রী থাকা কালিন অতি সাধারণ জীবনযাপন করেছেন। বিশ্বাস করতেন সবাইকে আর সেই বিশ্বাসের উপর ভর করে বলেছিলেন এ দেশের মানুষ আমাকে কখনোই ভূল বুঝতে পারেনা। সে বিশ্বাসই তার সব চেয়ে বিপদের কারণ হয়ে দাড়িয়েছিল, যে জনগনের জন্য সারাটি জিবন ব্যয় করেছিলেন, সংসার পরিবারকে অগ্রাহ্য করে গেছেন, সে মানুষ তাকে হত্যা করতে পারবে তা ছিল তার কল্পনার বাইরে। শোনা যায় সে দিন সেই হত্যাকারী নর পশুদের অবাক হয়ে সে প্রশ্ন করেছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর সমগ্র জীবন একটাই ব্রত ছিল বাংলা ও বাঙারির মুক্তির জন্য নিজেকে উৎসর্গ করা। এর শুরুটা সেই ১৯৪৮ সাল থেকে। ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বেও ভিত্তিতে পাকিস্তান সৃষ্টির পর তিনি উপলব্দি করেছিলেন এই রাষ্ট্র কাঠামোর মধ্যে দিয়ে আমরা বাঙালীরা নির্যাতিত নিস্পেষিত হব। তাই এ থেকে জনগণের মুক্তির জন্য তিনি বেছে নিয়েছিলেন আন্দোলন সংগ্রামের পথ। ১৯৫২ সালে ২১ শে ফেব্রুয়ারীর মহান ভাষা আন্দোলন তেকে শুরু করে ৫৬ এর রবীন্দ্র চর্চা অন্দোলন, ৬৪ সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী আন্দোলন এবং ৬৬ ছয় দফা আন্দোলন ৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামীলীগের নিরষ্কুশ বিজয় প্রতিটি ক্ষেত্রেই বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব। বঙ্গবন্ধু এমন একজন সম্মোহনী ক্ষমতাসম্পন্ন বাক্যারিমমাটিক নেতা ছিলেন। বাঙালী ও বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা লাভ করে। একাত্তরের রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা সংগ্রামের লক্ষ্য নিয়ে বাংলার মানুষকে তিনি যা বলতেন তাই অনুসরন করেছেন। তিনি ছিলেন সার্বজনীন, জনগনের ভালোবাসায় তিনি আপ্লুত ছিলেন, দেশ ও দশের কল্যাণই ছিল তার কাছে সব কিছুর ঊর্দ্ধে। জীবদ্দশায় কিংবদন্তি হয়ে উঠা বঙ্গবন্ধু বিশ্বের এক নম্বর নেতা বলেই প্রবল পরাক্রমশালী সামরিকজান্তার বিরূদ্ধে অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে সাড়ে সাত কোটি লোকের একটি কার্যকর সরকার গঠন করেছিলেন, যার প্রতিটি নির্দেশনা যথাযথ ভাবে পালন করেছিলেন বাংলার মানুষ। সংগ্রামী জীবনে জেল জুলুম অত্যাচার নির্যাতন আর স্বৈরশাসকের রক্তচক্ষু ছিল বঙ্গবন্ধুর নিত্যসঙ্গী। নিশ্চিত মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন বহুবার। আমৃত্যু একটি গণতান্ত্রিক প্রগতিবাদী ও অসাম্প্রদায়িক সমাজ বিনির্মানের স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি।
আমাদের দূর্ভাগ্য স্বাধীনতা রূপকার এই মহান নেতাকে সপরিবার হত্যা করে এমন এক ঘাতক দল বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস চেতনাকে মুছে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু সত্য কখনো পরাজয় হয়না। সেদিন ঘাতকের ছোড়া বুলেটে ৩২ নং বাড়ীর সিড়ি বেয়ে মুজিব পরিবারের রক্তে বাংলার মানচিত্রে যে রক্ত লেগেছিল তা আজও রক্তত্ব হয়ে জ্বলজ্বল করছে বাঙলার আকাশে আর বাতাসে। আজও খ্যান্ত হয়নি পরাজীত শক্তি। বিদেশি সেই পরাশক্তির বীজ আজও বাংলায় রয়েছে যারা আজও মানতে নারাজ ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ বলে কোন ইতিহাস সৃষ্টি হয়ে আছে। ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় কার মতোই সংকল্প ও অঙ্গিকার এবং ত্যাগের মানসিকতা নিয়ে দেশ ও দশের কল্যাণের জন্য বঙ্গবন্ধু নিজিকে বিলিয়ে দিয়েছেন তা থেকে প্রেরনা নিয়ে আজ আমাদের জাতিসত্তায় টিকিয়ে রাখতে হবে। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন কোন মহৎ কাজ করতে চাইলে ত্যাগ ও সাধনার প্রয়োজন। যারা ত্যাগ করতে প্রস্তুত নয় তারা কোন মহৎ কাজ হাসিল করতে পারেনা। তিনি স্বচ্ছ রাজনীতির কথা বলেছেন। প্রলোভন জয় করতে শিখিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারীরা, আমাদের প্রিয় স্বদেশ ভূমিকে গরীয়ান মুহিয়ান হিসাবে জগৎ সভায় প্রতিষ্ঠিত করার নিরন্তন প্রচেষ্টায় নিয়োজিত যারা, দারিদ্র জয়ের সাধনার নিমগ্ন তাদের প্রতি আহ্বান, সমৃদ্ধ দেশ গড়ার নবতর অভিযাত্রায় বিজয় নিশ্চিত করতে এগিয়ে চলুন দৃঢ় পণে ও অসীম সাহসে। কথা ও কাজে মিল রাখুন, সবার বিশ্বাস থাকুক অবিচল। আর এ জন্য অবশ্যই কর্তব্য হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর জন্ম বা মৃত্যু বার্ষিকীতে ব্যানার পোস্টার কিংবা তোরণ লাগিয়ে নয় তাকে স্বরণ করতে হবে জীবনের প্রতিটি চলনে তার মহৎ চিন্তা ও কর্মকান্ড থেকে প্রেরণা নিতে হবে। অপর দিকে এটাও মনে রাখা চাই যে অপশক্তি বঙ্গবন্ধু কে সপরিবারে হত্যা করেছে তাদের অনুসারিরা বাংলাদেশের উন্নতি ও সমৃদ্ধি চায়না। বাংলাদেশকে ফের প্রতিক্রিয়াশীল রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠা ষড়যন্ত্রে এক পায়ে দাড়িয়ে আছে এই বাংলার মাটিতে। নতুনভাবে মুক্তিযুদ্ধের, সত্য সুন্দরের বিরূদ্ধে হুশিয়ারী দিচ্ছে বারবার। আর এই বেড়াজাল ছিন্ন করতে সব পেশার ও সকল শ্রেণী মানুষের ঐক্যের মাধ্যমে কর্মোদ্যোগ ও আন্তরিক প্রাস চাই। এই প্রয়াস আমাদের সাফল্য এনে দেবে কারণ আমাদের সামনে উজ্জল ধ্রুব তারাসম সুমুজ্জল রয়েছেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি শুধু মাত্র আওয়ামীলীগের নেতা নন, তিনি সমগ্র জাতির নেতা। বঙ্গবন্ধু ইতিহাসের ট্র্যাজিক নায়কের মতো। রোমান বীর সিজারের মত তার পরিনত হলেও বঙ্গবন্ধুর নাম কোনদিন মুছে যাবার নয়। সকল চক্রান্ত ও বাঁধা ডিঙ্গীয়ে জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে হাত রেখে গড়ে তুলবো বঙ্গবন্ধুর রেখে যাওয়া স্বপ্নের এই সোনার বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশ হিসেবে।
-লেখক : চেয়ারম্যান, ৬ নং আওরাবুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদ, যুব ও ক্রিয়া সম্পাদক কাঠালিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগ, কাঠালিয়া, ঝালকাঠি।