তাল গাছ বাংলাদেশের অত্যন্ত সুপরিচিত একটি ফলজ বৃক্ষ। এদেশের মানুষের কাছে তাল অনেক পরিচিত একটি ফলের নাম। এখন বাজারে গেলেই দেখা মিলবে তালশাঁসের। অনেকেই গরম থেকে মুক্তি পেতে তালশাঁস খেয়ে থাকেন। এটি পাম গোত্রের অন্তর্গত একটি ফল।
দক্ষিণ এশিয়ায় প্রাপ্ত যে তাল, তার বৈজ্ঞানিক নাম Borassus flabellifer। তাল থেকে উৎপন্ন হয় কচি ও পাকা ফল, তালের রস ও গুড়। আর তাল গাছের পাতা, কাঠ সবই আমাদের জন্য উপকারী। কচি তালবীজ সাধারণত তালশাঁস নামে পরিচিত, যা বিভিন্ন প্রকার খনিজ উপাদান ও ভিটামিনে পরিপূর্ণ।
তাছাড়া মিষ্টি স্বাদের কচি তালশাঁস শুধু খেতেই সুস্বাদু নয়, বরং পুষ্টিতেও ভরপুর। যেসব পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরকে বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
প্রতি ১০০ গ্রাম তালের শাঁসে প্রায় ৯৩ শতাংশ পানি থাকে, যা বিভিন্ন প্রকার ইলেকট্রোলাইট সমৃদ্ধ। জ্যৈষ্ঠ মাসের গরমে পরিশ্রান্ত কর্মজীবী মানুষেরা তালশাঁস খেলে দেহকোষে ইলেকট্রোলাইট ব্যালেন্সের কাজটি বেশ দ্রুত হয়। এবং শরীরের পানিশূন্যতা দূর করে প্রাকৃতিকভাবে ক্লান্তিবোধ থেকে মুক্ত রাখে। এ কারণে তালশাঁসকে অনেক পুষ্টিবিদ প্রাকৃতিক শীতলীকারকও বলে থাকেন।
তালের শাঁসের প্রতি ১০০ গ্রামে ২৯ কিলোক্যালরি শক্তি বা এনার্জি থাকে। যার মধ্যে শর্করা থাকে ৬.৫ গ্রাম, প্রোটিন বা আমিষ ০.৭৫ গ্রাম এবং ফ্যাট অনুপস্থিত। গ্লাইসেমিক ইনডেক্স অনেক কম (৩৫ শতাংশ) হওয়ায় ডায়াবেটিস রোগীর জন্য এটি একটি চমকপ্রদ খাদ্য উপাদান। অতিরিক্ত ওজনের কারণে কী খাবেন এ নিয়ে যারা দুশ্চিন্তায় ভুগছেন, তারাও অনায়াসে খাদ্য তালিকায় তালশাঁস রাখতে পারেন। কারণ এটি তুলনামূলক কম ক্যালরিযুক্ত, কিন্তু পুষ্টিকর একটি খাবার।
কচি তালশাঁস প্রাকৃতিক জিলেটিন সমৃদ্ধ। আর এই প্রাকৃতিক জেলেটিনের কারণে পেট অনেক সময় যাবত ভরা ভরা অনুভূত হয়। তাই দীর্ঘ সময় ক্ষুধা অনুভব হয় না। তালশাঁস অধিক আঁশসমৃদ্ধ হওয়ায় যারা কোষ্ঠকাঠিন্যসহ অন্যান্য পেটের পীড়ায় ভুগছেন তাদের জন্য তালশাঁস হতে পারে প্রকৃতি প্রদত্ত এক ওষুধ।
তালশাঁসের প্রতি ১০০ গ্রামে ভিটামিন সি ৫ মিলিগ্রাম এবং ভিটামিন বি (থায়ামিন ০.০৪ মিলিগ্রাম, রিবোফ্লাভিন ০.০২ মিলিগ্রাম, নিয়াসিন ০.৩ মিলিগ্রাম) থাকে। কচি তালশাঁসে থাকা ভিটামিন সি ও বি কমপ্লেক্স আপনার পানি পানের তৃপ্তি বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। এ ছাড়া বমি বমি ভাব দূর করে, খাবারে রুচি বাড়ায়। তাছাড়া লিভারজনিত বিভিন্ন সমস্যা দূর করতেও তালশাঁস বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে।
তালশাঁসের প্রতি ১০০ গ্রামে থাকা ক্যালসিয়াম ২৭ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৩০ মিলিগ্রাম আর আয়রন ১ মিলিগ্রাম সহ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অন্যান্য খনিজ উপাদান হাড় ক্ষয়, উচ্চ রক্তচাপ, রক্ত স্বল্পতা ও ক্যানসারসহ নানাবিধ শারীরিক সমস্যায় বেশ উপকারী ভূমিকা পালন করে।
এছাড়া অতিরিক্ত রোদে ও গরমের কারণে ত্বকে বিভিন্ন রেশ বা অ্যালার্জিতে দেখা দিলে তালশাঁস মুখে লাগাতে পারেন। আবার সানবার্ন থেকে মুক্তি পেতে তালশাঁসের খোসা ব্যবহার করতে পারেন। এতে ত্বকের উপকার হবে।
তবে, তালশাঁসের অনেক পুষ্টিগুণ আছে বিবেচনা করে যদি কেউ প্রচুর পরিমাণে তালশাঁস খেয়ে ফেলেন, সে ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা যেতে পারে। যেমন– পেট গরম হতে পারে, ক্ষুধামন্দা, বমি বমি ভাব, এমনকি ডায়রিয়াও হতে পারে। তালশাঁস খাওয়ার ক্ষেত্রে কচি থাকা অবস্থায় খাওয়াই ভালো। শক্ত তালশাঁস খেলে পেটে ব্যথা হতে পারে। তালশাঁস ভরাপেটে নয়, বরং সকাল ও দুপুরের মাঝখানে মিড মর্নিং নাস্তার সময় খেলে স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়িয়ে সঠিক উপকার পাবেন।
সূত্রঃ ইনডিপেনডেন্ট টিভি।