নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল ॥
“রাত অনেক হয়েছে, এখন ডাক্তার স্যারকে ডাকলে সে প্রচন্ড রাগ করবেন। যা হবার সকালে দেখা যাবে, এখন গিয়ে ঘুমিয়ে পরেন”। দায়িত্বপ্রাপ্ত নার্সের এধরনের আচরণে সময়মতো চিকিৎসা সেবা না পেয়ে প্রসব বেদনায় ছটফট করা প্রসূতি মায়ের গর্ভের মধ্যেই মারা যায় নবজাতক। ঘটনাটি বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বেজগাতি এলাকায় অবস্থিত বেসরকারি সুইজ হাসপাতালের।
সোমবার সকালে উপজেলার ধানডোবা গ্রামের বাসিন্দা সবুজ ভূঁইয়া অভিযোগ করেন, ওই হাসপাতালের কর্মরত চিকিৎসক ও নার্সদের দায়িত্বে অবহেলা ও ভুল চিকিৎসার কারণে তার স্ত্রী ফরিদা বেগমের গর্ভের সন্তান মারা গেছে। এমনকি মিথ্যা আশ্বাস ও প্রতারণা করে তাদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং তার (সবুজ) কাছ থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জোরপূর্বক একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর আদায় করে নিয়েছেন।
মৃত সন্তান প্রসবের পর গত নয়দিন প্রসূতি ফরিদা বেগম ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় এতোদিন তারা মুখ খুলতে পারেননি। রবিবার হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নেওয়ার পর সোমবার সকালে সবুজ ভূঁইয়া অভিযোগ করে বলেন, গত ২৫ জুন তার স্ত্রীর প্রসব ব্যাথা উঠলে তাকে সুইজ হাসপাতালে আনার পর জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা.শফিকুল ইসলাম নিজেই আলট্রাসনোগ্রামসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মোটা অংকের টাকা বিল করেন। তিনি (চিকিৎসক) জানান, ফরিদার গর্ভের বাচ্চা সুস্থ্য আছে। আগামী দুই সপ্তাহ পর বাচ্চা প্রসবের সময় হবে জানিয়ে ব্যাথা উপশমের জন্য ডা. শফিকুল ইসলাম নিজেই ফরিদার শরীরে স্যালাইন পুশ করেন। পরে ফরিদার ব্যাথা আরও বেড়ে যাওয়ায় ওই চিকিৎসক স্যালাইনে একটি ইনজেকশন পুশ করে ফরিদাকে হাসপাতালে ভর্তি রাখার পরামর্শ দেন।
ফরিদার শ্বাশুড়ি বলেন, রাতে ফরিদার ব্যাথা আরও বেড়ে যায়। ওইসময় অসহায়ের মতো বারবার নার্সদের কাছে ছুটে গেলেও তারা অবহেলা করে চিকিৎসককে ডেকে না আনায় ফরিদার গর্ভের মধ্যেই তার নবজাতক শিশু মারা যায়। পরবর্তীতে মৃত সন্তান প্রসব করে ফরিদা।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ মাসুদ রানা উল্টো রোগীর স্বজনদের প্রতি অভিযোগ করে বলেন, রোগীর স্বজনরা হাসপাতালের বিল পরিশোধ না করার জন্য মিথ্যা একটি ঘটনা সাজিয়েছে। তবে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ সাইয়্যেদ মোঃ আমরুল্লাহ বলেন, সুইজ হাসপাতালের বিরুদ্ধে এর আগেও বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। সর্বশেষ দায়িত্বে অবহেলা ও ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যুর ব্যাপারে তদন্ত করে প্রয়াজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।